sakinahealthcenter.com

খৎনার উপকারিতা নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমেই আমার নিজের সন্তানের অভিজ্ঞতাটাই মনে পড়ে। ওর খৎনা করানোর আগে আমি যেমন উদ্বিগ্ন ছিলাম, তেমনি ভেবেছিলাম—শুধু ধর্মীয় রীতিই তো, এর পেছনে কি সত্যিই কোনো স্বাস্থ্যগত লাভ আছে? পরে যত জানলাম, বুঝলাম—স্বাস্থ্যগত লাভ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে হাইজিন মেনে চলা সহজ হয়, এমন অনেক আধুনিক পদ্ধতির বাড়তি সুবিধা রয়েছে।

এই লেখায় আমি শেয়ার করছি বাস্তব অভিজ্ঞতা, চিকিৎসকের পরামর্শ, আর যেসব অভিভাবক এখনও দ্বিধায় আছেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য সংগ্রহপরবর্তী পর্যায়ের যত্ন সম্পর্কে গাইডলাইন। যদি আপনি বা আপনার পরিবার খৎনা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, তবে চলুন—আলোচনা করি খোলামেলা ভাবে খৎনার উপকারিতা, ধর্মীয় দিক, এবং বর্তমান সময়ের স্বাস্থ্যবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি।


খৎনার উপকারিতা

খৎনার উপকারিতা অনেকেই শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেন, কিন্তু আমি যখন আমার ছেলের খৎনা করাই, তখনই বুঝলাম—এটা আসলে শুধু বিশ্বাসের বিষয় নয়, বরং স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা আর শিশুর মানসিক গঠনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ছোটবেলায় আমার বাবা সব সময় বলতেন, “পরিচ্ছন্নতা শুধু ইমানের অঙ্গ নয়, এটা নিজের প্রতি সম্মানও।” তখন কথাটা গভীরভাবে না বুঝলেও এখন উপলব্ধি করি খৎনা স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার একটি প্রমাণিত উপায়

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, খৎনা করা পুরুষদের ইউটিআই ও যৌনরোগ প্রতিরোধে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। কারণ, অতিরিক্ত ত্বক না থাকায় সহজে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করা যায়, ফলে হাইজিন মেনে চলা সহজ হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, খৎনার পর আমার ছেলের কোনো ইনফেকশন হয়নি যেটা আগে প্রায়ই দেখা যেত।

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে এখন খৎনা অনেক কম ব্যথা ও দ্রুত রিকভারি সহকারে হয়। ক্লিনিকে বসে যখন দেখছিলাম, খুব কম সময়েই কাজটা হয়ে গেল, আর ও বাড়ি ফিরে খুব স্বাভাবিকভাবে আচরণ করছিল। একদমই যেন কিছু হয়নি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ওর মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস ও স্বাভাবিকতা দেখেছি—যেটা আমি বিশ্বাস করি, তার মনের ওপরও ভালো প্রভাব ফেলেছে।

সব মিলিয়ে, খৎনার উপকারিতা শুধু শরীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক দিক থেকেও অনেক বড়। অভিভাবক হিসেবে আমাদের উচিত—সঠিক তথ্য জানা, বাচ্চাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা, আর আধুনিক ও নিরাপদ পদ্ধতি বেছে নেওয়া। এতে শুধু সন্তানের স্বাস্থ্যই নয়, ভবিষ্যৎ জীবনও হয় পরিচ্ছন্ন ও সচেতন।

ধর্মীয় ও সামাজিক দিক থেকে উপকারিতা

খৎনার উপকারিতা শুধু শরীরের জন্য নয়, ধর্ম ও সমাজেও এর বড় ভূমিকা আছে। ছোটবেলায় আমি দেখেছি, পরিবারের সবাই খৎনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। আমাদের এলাকায় এটা ছিল একধরনের পারিবারিক আয়োজনের মতো। দোয়া পড়া হতো, মিষ্টি খাওয়ানো হতো, শিশুটিকে বলা হতো—”তুমি এখন বড়।”

ইসলামে খৎনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। অনেক বাবা-মা মনে করেন, এটা সন্তানের ইমানি দায়িত্ব। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খৎনা করা পরিচ্ছন্নতার নিদর্শন। অনেক আলেম বলেন, এটা শুধু সুন্নাহ নয়, বরং শরীর ও আত্মার পরিচ্ছন্নতার মিলন।

সামাজিকভাবে খৎনা একটি পরিচিত রীতি। শিশুরা একে দেখে বড়দের মতো হওয়ার একটি ধাপ হিসেবে। আমি দেখেছি, খৎনার পর শিশুরা নিজের যত্ন নিতে আগ্রহী হয়। তারা পরিষ্কার থাকা, নিয়ম মানা এসব সহজে শেখে।

 সংক্ষেপে বলা যায়: খৎনার উপকারিতা ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে অনেক বড়। এটা পরিচ্ছন্নতা শেখায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, আর শিশুর মানসিক গঠনে সাহায্য করে।



সুন্নাহ অনুযায়ী গুরুত্ব

খৎনা শুধু একটি রীতি নয়, বরং ইসলামি সুন্নাহর অংশ। আমি যখন ছেলের খৎনা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম, তখন আমার মনের মধ্যে একটা ভাবনা চলছিল—“এটা কি শুধু সামাজিক চর্চা, নাকি ধর্মীয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু?” পরে আলেমদের কাছ থেকে শিখেছি, নবী (সা.) নিজেই এই রীতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা এমন একটি সুন্নাহ, যা শত শত বছর ধরে মুসলিম সমাজে চালু আছে।

সংক্ষেপে বললে: খৎনা ইসলামি জীবনধারার একটি সুন্নাহ, যা নবীজীর সময় থেকেই চলে আসছে।

ধর্মীয়ভাবে খৎনা মুসলিম শিশুর জন্য পরিচ্ছন্নতা ও আনুগত্যের প্রথম ধাপ। অনেক আলেম বলেন, এটা ‘ফিতরাহ’ বা প্রাকৃতিক নিয়মের অংশ। যেমন নখ কাটা বা দাঁত মাজা—তেমনই খৎনাও শরীর ও আত্মার পরিচ্ছন্নতার একটি চিহ্ন। আমার মনে আছে, খৎনার পর আমরা ছেলেকে বলেছিলাম, “তুমি এখন নবীজির পথে চলছো”—সে কথাটা শুনে ওর চোখে যে আনন্দ দেখেছিলাম, সেটা আজও মনে পড়ে।

উত্তরস্বরূপ বলা যায়: খৎনা শুধু শরীর নয়, বরং আত্মার পরিচ্ছন্নতাকেও বোঝায়; এটি নবীর পথে চলার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এখানে একটা দারুণ বিষয় আছে—যখন শিশুকে বলা হয়, “তুমি এখন সুন্নাহ অনুসরণ করলে”, তখন তার মনে একটা ভিন্ন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। ও বুঝতে পারে, সে একটা বিশেষ কাজ করেছে যা আল্লাহ ও নবীর পছন্দ। এটা শুধু একটা চিকিৎসা নয়, বরং আত্মিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠার শুরু।

খৎনা শিশুর মনে সুন্নাহ পালনের গর্ব আর ধর্মীয় দায়িত্ববোধ তৈরি করে।


সংস্কৃতি ও পরিচ্ছন্নতা

খৎনার উপকারিতা

খৎনা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ছোটবেলা থেকেই আমরা এটা দেখে বড় হয়েছি। পরিবারের সবাই মিলে এটি পালন করত। মিষ্টি বিতরণ, দোয়া, আর খুশির পরিবেশ—সব কিছু মিলিয়ে উৎসবের মতোই লাগত।

খৎনা আমাদের সংস্কৃতির পরিচ্ছন্নতা শেখার এক দিক।

আমার ছেলের খৎনার সময় আমি সেই অনুভূতি আবার পেয়েছি। যদিও আমরা আধুনিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলাম, কিন্তু দাদা-দাদি সেই আগের মতোই আয়োজন করেছিল। এতে সে বুঝতে পেরেছিল—এটা শুধু চিকিৎসা নয়, এটা আমাদের সংস্কারের অংশ।

খৎনা শিশুদের সংস্কৃতি ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

খৎনার পর আমার ছেলে নিজেকে পরিষ্কার রাখায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। আগে যেখানে বলেও কাজ হতো না, এখন নিজেই বলে—“আমি পরিষ্কার থাকি।” আমি বুঝেছিলাম—এটাই খৎনার ইতিবাচক প্রভাব।

 খৎনা পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে।

আমাদের সমাজে পরিচ্ছন্নতা শুধু শরীরের বিষয় না। এটা নৈতিকতাও শেখায়। খৎনা সেই শিক্ষার একটি ছোট্ট শুরু। এতে শিশুর মধ্যে শৃঙ্খলা আর দায়িত্ববোধ তৈরি হয়।

খৎনা সংস্কৃতি, পরিচ্ছন্নতা এবং ভালো অভ্যাস তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

স্বাস্থ্যগত লাভ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা

খৎনা শুধু ধর্ম বা সংস্কৃতি না—এটা স্বাস্থ্য রক্ষার এক শক্তিশালী উপায়।
আমি আগে কখনো ভাবিনি, এই ছোট্ট সিদ্ধান্তটা আমার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এত সাহায্য করবে। কিন্তু বাস্তবেই করেছি এমন অভিজ্ঞতা। খৎনার পর ওর ঘন ঘন ইনফেকশন একেবারে কমে গেল।

খৎনা ইউরিন ইনফেকশন ও ত্বকে জমে থাকা ময়লা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আমি মনে করি, সবার আগে যা বোঝা দরকার—খৎনার ফলে পুরুষাঙ্গে যে বাড়তি চামড়া থাকে, সেটা সরিয়ে ফেলা হয়। এতে পরিষ্কার রাখা সহজ হয়। অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, এতে ইউটিআই বা প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
আমার ছেলে আগেও কিছুদিন পরপরই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া নিয়ে অভিযোগ করত। কিন্তু খৎনার পর সে নিজেই বলেছে—“মা, এবার আর ব্যথা লাগে না!”

খৎনা করলে মূত্রনালির সংক্রমণ কম হয় এবং ছেলেরা বেশি পরিষ্কার থাকতে শেখে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি। বড় হয়ে ছেলেরা যখন সম্পর্কের বয়সে পা দেয়, তখন তাদের শরীরকে নিরাপদ রাখা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে—খৎনা এই রোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০-৬০% পর্যন্ত কমাতে পারে।
যদিও এটা শুনলে একটু ভারী মনে হয়, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি তো আজ থেকেই নেওয়া দরকার, তাই না?

খৎনা যৌনরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ভবিষ্যতে শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া খৎনা করলে হাইজিন রক্ষা করা সহজ হয়। ত্বকের নিচে ময়লা জমে থাকার ঝামেলা থাকে না। ছেলেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তোলে ছোটবেলা থেকেই।

আমার ছেলের একটা কথা আজও মনে আছে—“খৎনার পর আমি অনেক ফ্রেশ ফিল করি।” শুনে মনে হয়েছিল, আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।

খৎনা স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা আর প্রতিরোধ ক্ষমতা—তিনটিই একসাথে বাড়ায়।

ইউটিআই ও যৌনরোগ প্রতিরোধ

খৎনার পর আমার ছেলের একটা বড় পরিবর্তন আমি দেখেছি। আগে ও প্রায়ই বলত, “মা, প্রস্রাবে ব্যথা হয়।” আমি বুঝতাম না কেন এমন হয়। পরে ডাক্তার বললেন, ওর ইউটিআই হচ্ছে।

খৎনা ইউটিআই প্রতিরোধে সাহায্য করে, কারণ এতে ময়লা জমে না।

খৎনার পর এসব সমস্যা একদম কমে যায়। সে আর ব্যথার কথা বলেনি। ওর মুখে হাসি ছিল। আমিও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এটা শুধু একটা চিকিৎসা না, যেন একরকম শান্তি।

ইউটিআই মানে মূত্রনালির সংক্রমণ। খৎনা করলে এর ঝুঁকি কমে।

শুধু ইউটিআই না, খৎনা ভবিষ্যতের অনেক বড় সমস্যাও কমায়। ডাক্তার বললেন, এতে যৌনরোগের ঝুঁকি কমে। যেমন HIV বা HPV। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা বলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, খৎনা করলে HIV-এর ঝুঁকি ৫০-৬০% কমে যায়।

যদিও আমার ছেলে ছোট, আমি চাই ও বড় হলে নিরাপদে থাকুক। ছোটবেলায় যত্ন নিলে ভবিষ্যৎ ভালো হয়—এটা আমরা সবাই জানি।

খৎনা ভবিষ্যতের জন্য এক ধাপ এগিয়ে রাখা যায়।

আমার ছেলেও খুশি। ও নিজেই বলে, “মা, আমি এখন অনেক পরিষ্কার থাকি।” এই কথাটা শুনে আমি বুঝলাম—সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল।

খৎনার পর শিশুরা পরিষ্কার থাকতে শেখে এবং ভালো অভ্যাস গড়ে।

সব মিলিয়ে বললে, খৎনা একটা ছোট কাজ, কিন্তু এর উপকার অনেক বড়। এটা শুধু শরীর নয়, ভবিষ্যৎও নিরাপদ রাখে।

খৎনা ইউটিআই ও যৌনরোগ প্রতিরোধে কাজ করে, আর শিশুর পরিচ্ছন্নতা বাড়ায়।

হাইজিন মেনে চলা সহজ হয়

খৎনার পর আমি একটা জিনিস খুব স্পষ্ট করে দেখেছি—পরিষ্কার থাকা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার ছেলে আগে গোসলের সময় অনেক ঝামেলা করত। কিছুতেই নিচের অংশ পরিষ্কার করতে চাইত না। বলত, “ওই জায়গাটা খুব অদ্ভুত লাগে।” আমি বুঝতাম, ওর অস্বস্তি হচ্ছে।

খৎনা করলে অতিরিক্ত ত্বক না থাকায় পরিষ্কার রাখা সহজ হয়, ফলে হাইজিন বজায় রাখা সহজ হয়।

খৎনার পর সে নিজেই বলল, “মা, এখন আমার ওখানে ময়লা জমে না।” শুনে আমি অবাক! ও এখন আর গোসল নিয়ে ঝামেলা করে না। বরং নিজেই বলে, “আজ সঠিকভাবে গোসল করেছি।” এটা শুধু শরীর নয়, মনেও একটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

 ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছে—খৎনার পর শিশুরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন হয়।

ডাক্তাররাও বলেন, ছেলেদের অতিরিক্ত চামড়ার নিচে ময়লা জমে যেতে পারে। সেটা না জানলে সহজে বোঝা যায় না। খৎনা হলে এই অংশটা পরিষ্কার রাখা সহজ হয়। ফলে ইনফেকশন বা দুর্গন্ধের ভয়ও কমে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, খৎনা করলে ব্যক্তিগত হাইজিন মানা অনেক সহজ হয়।

আমি মনে করি, এটা যেন ঠিক সেই রকম—যখন আমরা রান্নাঘর পরিষ্কার রাখতে চাই, তখন পুরনো জিনিস ফেলে দিই। খৎনাও যেন তেমন, অপ্রয়োজনীয় কিছু সরিয়ে নতুন পরিচ্ছন্ন অভ্যাস তৈরি করা।

খৎনা নতুন পরিচ্ছন্নতার রুটিন গড়তে সাহায্য করে, যা শিশুর ভবিষ্যতে কাজে লাগে।

সবচেয়ে বড় কথা, পরিচ্ছন্নতা শুধু বাইরের না—এটা শিশুর নিজেকে নিয়ে ভাবার শুরু। আমার ছেলে এখন যখন নিজের শরীর পরিষ্কার রাখে, আমি বুঝি—এটা শুধু একটা চিকিৎসা নয়, বরং এক ধাপ এগিয়ে থাকা।

খৎনা শিশুদের নিজেকে গুরুত্ব দিতে শেখায়, যার শুরু হয় হাইজিন থেকে।

আধুনিক পদ্ধতির বাড়তি সুবিধা

খৎনার উপকারিতা

(খৎনা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন? এখনকার পদ্ধতি অনেক সহজ!)

আজকের দিনে খৎনা মানেই আর আগের মতো ভয় বা ব্যথা নয়। আমি নিজেই বুঝেছি এটা, যখন ছেলের খৎনা করাতে গিয়েছিলাম। আগে শুনতাম—ব্যথা, ইনফেকশন, কাঁদাকাঁদি। কিন্তু এখনকার আধুনিক পদ্ধতিতে সব কিছু হয় খুবই সহজ আর আরামদায়কভাবে।

খৎনার আধুনিক পদ্ধতিতে ব্যথা খুব কম হয় এবং রিকভারি অনেক দ্রুত হয়।

আমার ছেলে ছিল খুব ভয় পাচ্ছিল। আমিও চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ক্লিনিকে গিয়ে দেখি, তারা আগে থেকেই সব কিছু বুঝিয়ে বলছে। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে খুব অল্প সময়েই খৎনা শেষ। ও কিছু বুঝে উঠার আগেই কাজ শেষ।

এই পদ্ধতিতে সময় কম লাগে, আর শিশুরাও স্বাভাবিক আচরণে ফিরে আসে দ্রুত।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে যেটা—ওর মুখে কোনো ব্যথার ভাব দেখিনি। খৎনার পরদিনই সে খেলাধুলা শুরু করে দিল। আমি অবাক! মনে হচ্ছিল, এ যেন কোনো ছোট টিকা দেওয়ার মতো ব্যাপার।

খৎনার পর শিশুরা খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এটা তাদের মানসিক চাপও কমায়।

অনেকেই ভাবেন—খৎনা করাব, কিন্তু ইনফেকশন হলে? আমি নিজেও ভয় পেতাম। কিন্তু ডাক্তার বললেন, এখন যে টেকনিকগুলো আছে (যেমন: ক্ল্যাম্প, লেজার বা পিন পদ্ধতি), এতে ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক কম। শুধু নিয়ম মানলেই হয়।

আধুনিক খৎনা পদ্ধতিতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কম, যদি সঠিক যত্ন নেওয়া হয়।

একটা ব্যাপার আমি বুঝেছি—যদি সঠিক জায়গায়, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে খৎনা করানো যায়, তাহলে ভয় বা চিন্তার কিছুই নেই। বরং এতে শিশুর শরীর ও মনের জন্য দুটো দিকেই সুবিধা।

আধুনিক খৎনা শিশুদের জন্য নিরাপদ, সহজ এবং মানসিকভাবে অনেক স্বস্তিদায়ক।

সবশেষে বলি—খৎনা এখন আর আগের মতো “একটা বড় ঘটনা” না। এখনকার পদ্ধতিতে এটা ছোট, সহজ আর প্রায় ব্যথাহীন এক চিকিৎসা। আর ঠিকভাবে করলে, ভবিষ্যতের জন্য এটা হয় এক দারুণ সিদ্ধান্ত।

খৎনার আধুনিক পদ্ধতি একদিকে স্বাস্থ্যবান্ধব, অন্যদিকে শিশুর জন্য ভয়হীন অভিজ্ঞতা।

শিশুদের খৎনা অভিজ্ঞতার ইতিবাচক প্রভাব
(খৎনার পর শিশুদের মধ্যে মানসিক ও শারীরিকভাবে দেখা যায় অনেক পরিবর্তন। আমি নিজে সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।)

আমার ছেলের খৎনা হওয়ার দিনটা আমি খুব স্পষ্ট মনে রেখেছি। ওর ভয় ছিল, আমরাও চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু প্রক্রিয়াটা এত সহজ আর দ্রুত হয়েছিল, ও যেন বুঝতেই পারেনি—একটা বড় ধাপ পেরিয়ে এসেছে।

খৎনার অভিজ্ঞতা শিশুর মনে সাহস আর আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।

যে ছেলেটা আগে সামান্য কাটা লাগলেও ভয় পেত, সে এখন ছোটখাটো ব্যথাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেয়। আমি দেখেছি—এই অভিজ্ঞতা ওর মধ্যে একধরনের মানসিক শক্তি এনেছে। ও নিজেকে “বড় হয়ে যাওয়া”র অনুভূতিতে দেখে।

খৎনার পর শিশুরা নিজেকে দায়িত্ববান আর পরিপক্ক ভাবতে শেখে।

খৎনার পরপরই আমরা ওকে বলেছিলাম, “তুমি এখন বড় ছেলে।” কথাটা ওর চোখে কীভাবে আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেটা আমি ভুলতে পারি না। ও হেসে বলেছিল, “আমি এখন আসলেই বড়!” এই অনুভূতি ওর আচরণে পরিষ্কার ফুটে উঠেছিল।

খৎনা শিশুর মধ্যে একটি বড় হওয়ার অনুভব তৈরি করে, যা আত্মসম্মান বাড়ায়।

আরেকটা বিষয় খুব লক্ষণীয় ছিল—ও এখন নিজের যত্নে অনেক বেশি আগ্রহী। প্রতিদিন পরিষ্কার থাকা, নিয়ম মেনে চলা এসব যেন ওর নিজের চেষ্টাতেই হয়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হতো, এখন ও নিজেই বলে, “আমি সব ঠিকঠাক করব।”

খৎনার পর পরিচ্ছন্নতা ও নিয়ম মানার অভ্যাস শিশুদের মধ্যে গড়ে ওঠে।

সবশেষে বললে, খৎনার অভিজ্ঞতা আমার ছেলের জীবনে শুধু শারীরিক পরিবর্তন আনেনি—আনেছে আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ আর পরিচ্ছন্নতার চেতনা। এটা একটা ছোট সিদ্ধান্ত হলেও, তার প্রভাব অনেক গভীর।

খৎনা শিশুদের মধ্যে মানসিক পরিপক্বতা, আত্মবিশ্বাস ও পরিচ্ছন্নতার ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

 

আত্মবিশ্বাস ও স্বাভাবিকতা

আমার ছেলে প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিল। ওর চোখে ভয় ছিল, মুখে ছিল চাপা চিন্তা। কিন্তু আমি বলেছিলাম, “তুই সাহসী। কিছুই হবে না।”

খৎনা সাহস তৈরি করে। শিশুর মনে ভয় কেটে যায়।

খৎনার পরে আমি একদম বদলে যাওয়া ছেলেকে দেখেছি। ওর চোখে তখন ছিল গর্ব। যেন ও বুঝেছে—এটা বড় হওয়ার একটা ধাপ। সবাই যখন বলল, “তুমি এখন বড়”, ওর হাসিতে সেটা ধরা পড়ল।

শিশুর মনে বড় হওয়ার ভাব আসে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

পরদিন সকালেই ও আবার খেলতে নেমে গেল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো বিশ্রাম নেবে, কিন্তু না। ও হাসল, দৌড়াল, গল্পও করল। খৎনা ওকে আটকায়নি, বরং এগিয়ে দিয়েছে।

খৎনার পর শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়।

একবার ওর এক বন্ধু ভয় পাচ্ছিল ডাক্তার দেখাতে। আমার ছেলে তখন বলল, “আমি তো খৎনা করিয়েছি, কিছুই হয়নি!” আমি তখন বুঝলাম—ও শুধু সাহসী না, এখন অন্যদেরও সাহস দেয়।

এই অভিজ্ঞতা শিশুকে সাহসী করে তোলে এবং নিজে থেকে শিখতে সাহায্য করে।


মানসিকভাবে প্রস্তুত করার কৌশল

খৎনার বিষয়টি হঠাৎ করে শিশুকে জানানো ঠিক নয়। আমি সময় নিয়েছি। ধীরে ধীরে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে বলেছি, “নবীজি (সা.) খৎনা করেছিলেন। এটি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি।”

আগেই বিষয়টি জানালে শিশুর ভয় কমে।

শিশুরা অজানা জিনিসে ভয় পায়। তাই খোলামেলা কথা বলাটা দরকার। আমি বলেছি, “এটা খুব ছোট একটি কাজ। তুমি সাহসী হলে সহজে পারবে।” এতে ওর মন শান্ত ছিল।

সহজ ভাষায় কথা বললে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

আমি ছেলেকে আগে থেকেই ক্লিনিকে নিয়ে গেছি। জায়গাটা যেন ওর কাছে অপরিচিত না লাগে। ও ঘর দেখে খুশি হয়েছিল, কারণ সেখানে খেলনা ছিল। তখন ও নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পেরেছিল।

পরিচিত পরিবেশ শিশুর ভয়ের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

আমি আরেকটি কাজ করেছিলাম। খৎনার পর কী খেলনা কিনব, সেটা নিয়ে আমরা একসাথে ভাবতাম। ও বলত, “আমি খৎনা করব, তারপর গাড়ি খেলব।” এতে ওর মন ভালো থাকত।

পুরস্কারের পরিকল্পনা শিশুর মানসিক চাপ কমায়।

সবশেষে, আমি শুধু ওর পাশে ছিলাম। শক্ত করে হাত ধরেছিলাম। বলেছিলাম, “তুই একা না, আমি আছি।” এতে ও সাহস পেয়েছিল, যদিও একটু ভয় ছিল।

অভিভাবকের পাশে থাকা শিশুর জন্য সবচেয়ে বড় ভরসা।


অভিভাবকের জন্য করণীয়

খৎনা শিশুর জন্য একটি বড় অভিজ্ঞতা। এই সময় অভিভাবকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু করণীয় দেওয়া হলো, যা শিশুকে সাহসী ও প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।

১. ধাপে ধাপে বোঝান

হঠাৎ করে কিছু না বলে ধীরে ধীরে শিশুকে বোঝান। সহজ গল্প ব্যবহার করুন। ধর্মীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরতে পারেন।

২. খোলামেলা কথা বলুন

শিশু যেন প্রশ্ন করতে পারে, এমন পরিবেশ তৈরি করুন। ভয় বা দ্বিধা থাকলে তা জানাতে উৎসাহ দিন। সরাসরি না বলেও বিষয়টি সহজ করে বোঝানো যায়।

৩. আগেই জায়গা দেখিয়ে দিন

যেখানে খৎনা হবে, সেখানে আগে নিয়ে যান। ঘর, ডাক্তার বা নার্স দেখে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অপরিচিত পরিবেশে ভয় বেশি হয়।

৪. খৎনার পরের পরিকল্পনা করুন

খৎনার পর শিশুকে একটি খেলনা বা উপহার দেওয়ার কথা বলুন। এতে সে আনন্দের কিছু ভাবতে পারবে, ভয় কমবে।

৫. পাশে থাকুন

খৎনার সময় ওর পাশে থাকুন। হাত ধরে সাহস দিন। শিশুর কাছে সবচেয়ে বড় ভরসা হলো মায়ের বা বাবার উপস্থিতি।

সঠিক তথ্য সংগ্রহ

খৎনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই আগে থেকে সঠিক তথ্য জানা খুব দরকার। শুধু শুনে বা অনুমান করে কাজ করা ঠিক নয়।

১. চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন

প্রথমে শিশু বিশেষজ্ঞ বা সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কোন পদ্ধতি সবচেয়ে নিরাপদ, সেটা জেনে নিন। শিশুর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরামর্শ নিন।

২. পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে জানুন

ক্লিনিক কতটা পরিষ্কার? যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার হয় কি না? এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে আগেই জায়গাটি দেখে আসুন।

৩. খৎনার পরে কী করতে হবে, তা জেনে নিন

শুধু খৎনা নয়, পরের যত্নও খুব জরুরি। কোন ওষুধ লাগবে? ব্যথা হলে কী করব? এসব আগেই জেনে রাখলে হঠাৎ বিপদে পড়তে হবে না।

৪. অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করুন

পরিবারের কারো অভিজ্ঞতা থাকলে শুনুন। তবে সব পরামর্শই গ্রহণযোগ্য নয়। বয়স, সময় ও পরিবেশ ভিন্ন হলে সিদ্ধান্তও ভিন্ন হতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *