সার্জিকাল পদ্ধতির ব্যাখ্যা
সার্জিকাল খৎনা বা সার্জিকাল সার্কামসিশন হলো একটি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে সার্জনের দক্ষ হাতে অগ্রচর্ম (foreskin) অপসারণ করা হয়। এ পদ্ধতিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এখনো অনেক জায়গায় নিরাপদ ও কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত।
ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
সার্জিকাল খৎনা করার সময় সাধারণত নিচের যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয়:
- স্ক্যালপেল বা ব্লেড
- সার্জিকাল কাঁচি
- সেলাইয়ের সুতা বা স্টিচিং ম্যাটেরিয়াল
- ফোর্সেপ ও ক্ল্যাম্প
জীবাণুমুক্ত গজ ও ড্রেসিং সরঞ্জাম
অপারেশন প্রক্রিয়া
প্রথমে রোগীকে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে প্রস্তুত করা হয়। স্থানীয় অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগের পর স্ক্যালপেল দিয়ে অগ্রচর্ম কেটে ফেলা হয়। তারপর রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে সেলাই দেওয়া হয় এবং জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ২০–৩০ মিনিট লাগে।
ঝুঁকি ও সুরক্ষার বিবরণ
যেকোনো সার্জিকাল প্রক্রিয়ার মতো খৎনাতেও কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে সঠিক বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এগুলো সাধারণত নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
রক্তপাত, ইনফেকশন
খৎনার সময় বা পরে হালকা রক্তপাত স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনিয়মিত ড্রেসিং বা পরিচর্যার অভাবে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
ব্যথা ও আরোগ্য সময়
খৎনার পরে কিছুটা ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কমে যায়। আরোগ্য হতে সাধারণত ৭–১০ দিন সময় লাগে।
বিকল্প পদ্ধতির তুলনা
আধুনিক সময়ে সার্জিকাল খৎনার চেয়ে নতুন পদ্ধতিগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রিং বনাম আলিসক্ল্যাম্প
- রিং পদ্ধতি: খৎনার জন্য প্রচলিত রিং পদ্ধতি বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। রিং ব্যবহারে প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক দ্রুত হয় এবং রক্তপাতও কম হয়, তবে এটি মূলত নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের জন্য বেশি উপযোগী। বড় বাচ্চা বা ভিন্ন শারীরিক অবস্থা থাকলে অনেক সময় অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এছাড়া রিং খুলে যাওয়া বা চাপের কারণে স্থানীয় জটিলতার ঝুঁকি থেকে যায়।
- আলিসক্ল্যাম্প পদ্ধতি: আধুনিক আলিসক্ল্যাম্প পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ সমাধান হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এতে কাটাছেঁড়া প্রায় হয় না বললেই চলে, ফলে ব্যথা অনেক কম অনুভূত হয়। সেলাই বা ভারী ব্যান্ডেজের দরকার হয় না, ফলে শিশুর অস্বস্তি ও ঝামেলা কমে যায়। সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম এবং ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়, তাই আরোগ্যও ত্বরান্বিত হয়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো – এটি কেবল নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়দের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য এবং এটি WHO, FDA এবং ISO দ্বারা স্বীকৃত।
WHO অনুমোদনের গুরুত্ব
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) খৎনার বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতির নিরাপত্তা যাচাই করেছে। WHO অনুমোদিত যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহার করলে ঝুঁকি অনেক কমে যায় এবং রোগীর আস্থা বাড়ে।
পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার
খৎনার পর সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঔষধ ও পরিচর্যা
ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যথানাশক ও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। প্রতিদিন ড্রেসিং পরিবর্তন এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আবশ্যক।
শিশুর মানসিক স্বস্তি
খৎনার সময় ও পরবর্তী সময়ে শিশুর মানসিক স্বস্তি দেওয়া জরুরি। বাবা-মায়ের সহযোগিতা, সঠিক আশ্বাস এবং আরামদায়ক পরিবেশ দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে।
সার্জিকাল পদ্ধতির উপযোগিতা
কার জন্য উপযুক্ত?
- প্রাপ্তবয়স্ক বা বড় শিশুদের জন্য
- যেখানে আধুনিক যন্ত্র পাওয়া যায় না
- জটিল কেস বা অতিরিক্ত অগ্রচর্ম সমস্যায়
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
যেকোনো খৎনার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্ট বা সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন ও জটিলতা এড়ানো যায়।সার্জিকাল খৎনা একটি দীর্ঘদিনের প্রচলিত ও কার্যকর পদ্ধতি হলেও আধুনিক বিকল্প যেমন রিং বা আলিসক্ল্যাম্প আরও দ্রুত, নিরাপদ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে কোন পদ্ধতি বেছে নেবেন তা নির্ভর করবে বয়স, শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর। তাই সর্বোপরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।